ঘটনাটি ঘটেছে সচলায়তনে। কদিন আগে রূপক কর্মকার নামে এক "অতিথি ব্লগার" সেখানে নাযিল হলেন। তাঁর লক্ষ্য ব্লগের খাতায় কবি আবু হাসান শাহরিয়ারকে প্রমোট করা। সচলায়তনের কেউ কেউ শাহরিয়ার-ভক্ত, ফলে কাজটি তেমন কঠিন নয়। তিনি নাযিল হলেন আবু হাসান শাহরিয়ার-এর একটি সাক্ষাৎকারসহ। সেখানে আ হা শা সচলায়তনের ব্লগারদের "বিশ্ব নাগরিক" জাতীয় বিশেষণে বিশেষায়িত করেছেন। আর যায় কই? সচলায়তনের ব্লগাররা ঝাঁপিখোলা কৃতজ্ঞতা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়লেন ঐ পোস্টে, শাহরিয়ার-বন্দনায় এবং আত্মতুষ্টিতে সচলায়তন বরাবরের মত মুখর হয়ে উঠল। অভিষিক্ত হলেন রূপক কর্মকার নিজেও, তবে সেটি শাহরিয়ার-এর বার্তা পৌঁছে দেয়ার কারণেই। নিজেও তিনি কোনোভাবেই নিজেকে বিশিষ্ট করে তুললেন না, নির্লোভ বার্তাবাহকের মতই দায়িত্ব পালন করলেন। অবাক লাগল! কে এই শাহরিয়ারময় রূপক কর্মকার, শাহরিয়ারের সিগনেচার ছাড়া ত্রিভূবনে যার অস্তিত্ব কিছু নাই। ভাবলাম হতে পারে, কতরকম ভক্তই না জগতে থাকে, প্রভুর পায়ে জীবন সঁপে দেয়া ভক্তেরই কাজ বটে।
কিছুপরই বুঝলাম, যত নখদন্তহীন নির্লোভ ভাবা হচ্ছিল তিনি ততটা নন। সচলায়তনের ব্লগার পলাশ দত্ত ও মুজিব মেহদীর সাথে রীতিমত পায়ে পা দিয়ে গ্যাঞ্জাম বাঁধানোর ধরন দেখে সেটা আঁচ করা গেল। পলাশ দত্তের কবিতার সমালোচনা করতে গিয়ে যেরকম কৃপাণহস্ত এবং কনফিডেন্ট লাগল রূপককে, মনে হল তাঁর ওপর আবু হাসান শাহরিয়ারের আত্মা যেন ভর করেছে! মুজিব মেহদীর সাথে তর্ক করতে গিয়ে তিনি সেই স্বর অব্যাহত রাখলেন, এবং তাঁর সমর্থনে আরো আরো শাহরিয়ার-ভক্তের আবির্ভাব হতে থাকল সচলায়তনে। মজার বিষয় হল, নতুন এই ভক্তরা কেউ সচলায়তনের নিয়মিত ব্লগার নন, "অতিথি" মন্তব্যকারী। শেষ বোমাটা ফাটালেন সচলায়তন কর্তৃপক্ষ। তারা জানালেন যে রূপক কর্মকার এবং তার সমর্থক-মন্তব্যকারীদের আইপি একই। অর্থাৎ একই ব্যক্তি ভিন্ন ভিন্ন নামে কাজ চালিয়েছেন! ভাগ্যিস আবু হাসান শাহরিয়ার-এর আইপি জানেন না তারা! অবশেষে এই ধরনের প্রতারণার অভিযোগে ব্যান খাইলেন রূপক বাবু!
আবু হাসান শাহরিয়ার-এর ইন্টারভিউ পড়ার পর মনে হচ্ছিল যে, তিনি সচলায়তনে প্রবেশ করতে চান। কিন্তু সচলায়তনের প্রবেশপথ তার আকৃতির তুলনায় বেশ ছোট, ততটুকু মাথা নুইয়ে ঢোকার ব্যাপারে শাহরিয়ারের মন হয়ত সায় দিচ্ছিল না। তাই সচলায়তনে রূপকবাবুর আগমন, দরজা বড় করার জন্য, "স্বাগতম" লেখা আলাদা গেট বানানোর জন্য। আইকন হয়ে প্রবেশ করতে চান তিনি, আইকন হয়েই বিহার করতে চান। আবার "প্রিয় কবি"কে এই ব্লগে দেখতে পাবার জন্য আকূল হয়ে উঠেছিলেন অনেকেই। তাতে রূপক বাবু হয়তো একটু বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলেন! গুরুর স্টাইলে ছড়ি ঘোরানোর মকশো করতে গিয়েই তীরে এসে তরী ডুবলো তার! তরী ডুবলো কার?
আবু হাসান শাহরিয়ার-এর সাংগঠনিক প্রতিভা আছে, আবার অনেকেই তাঁকে কবি মনে করেন। আমি অবশ্য খুব পড়ে দেখি নি, বিচ্ছিন্ন দুচার লাইন এখানে ওখানে দেখেছি, তাতে পড়বার আগ্রহ তৈরি হয় নি। কিন্তু তারেক রহিমের কী হবে? তার মুখটা মনে করে আমার কষ্টই লাগছে, ডাই-হার্ড শাহরিয়ার-ফ্যান সে, রূপক-কর্মকার কেলেংকারির মূল প্রণোদনা কোত্থেকে এল, এটা বোঝার মত যথেষ্ট বুদ্ধি ওর আছে আমি জানি।
৮টি মন্তব্য:
ঘটনার সময় আমি সচলায়তনে খুব একটা ঢুকিনি। আপনার এই লেখা পড়ে ইতিহাসটা বুঝলাম। কী রূপ দেখালো রূপক কর্মকার।
মনে করতে পারছি না রূপক কর্মকারের কর্মকান্ডের কী পরিমাণ প্রশংসা করেছিলাম আমি। খুব একটা বেশি করতে পারিনি বলে আফসোস হচ্ছে এখন।
ব্লগ বিষয়ে আপনার এই জার্নাল লিখে রাখাটা একসময় বড় কাজে লাগতেও পারে।
শুভেচ্ছা।
আমার ধারণা রূপকের আসল রূপ আমরা এখনো দেখি নি, কেবল অনুমান করতে পারি। ধন্যবাদ শোমচৌ, এই যে আমার ব্লগে এসে দুপাতা উল্টাচ্ছেন এর চেয়ে আর কাজের কী হতে পারে! আপনাকেও শুভেচ্ছা।
আমি বন্ধুদের সহযোগিতায় এইমর্মে খোঁজ লাগাবার চেষ্টা করেছিলাম যে কুমিল্লায় রূপক কর্মকার বলে কেউ আছেন কি না, কিংবা চট্টগ্রামে কলেজে পড়ান এমন কোনো নাজনীন সুপ্তি আছেন কি না, যিনি রাজবাড়ীর মেয়ে এবং যিনি বিশদ বাংলায় যাতায়াত করেন। ব্যর্থ হয়েছি।
এরকম নামে কেউ ওসব এলাকায় বিচরণ করেন বলে আমার বন্ধুরা নিশ্চিত করতে পারেন নি। আমি ধারণা করি, ব্যাপারটা ঢাকা থেকেই ঘটে থাকবে।
তবে এটা ঠিক যে, রূপক/সুপ্তি/অতিথি এই ঘটনায় ইন্টারনেটের আইপি অ্যাড্রেস বিষয়ে যে ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করল, তা তাদের পরবর্তী পরিকল্পনায় সহায়ক হবে।
শুকরিয়া জানাই আপনাকে মুজিব, বেশিদূর আগান নাই বলে... কেঁচো খুঁড়তে শেষে না আবার সাপ বের হয়!
পড়েছিলাম সচলায়তনে ! নিজে ও একটা মন্তব্য করেছিলাম রুপক কর্মকারের কোন একটা লেখায় । কিন্তু জানতাম না তো ...
ভালো লাগছে সুমন ভাই , আপনার ব্লগটা দেখে । মাঝে মাঝে ঢুঁ মেরে যাবো
ধন্যবাদ সুমন সুপান্থ। সবসময় স্বাগতম।
শাহরিয়ারনামা
http://www.somewhereinblog.net/blog/Observerblog/28860440
original hit craver
http://www.sachalayatan.com/arup/19620#comment-134115
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন