শুক্রবার, ৭ নভেম্বর, ২০০৮

প্রথম আলো-র ১০ বছরের ১০ বই: কিছু পর্যবেক্ষণ

প্রথম আলো বছরে বেশ কয়েকবার বই নির্বাচন করে থাকে। সেরা ১০ মননশীল বই, সেরা ১০ সৃজনশীল বই, তরুণদের সেরা ১০ বই, প্রথম আলো বছরের সেরা মননশীল ও সৃজনশীল বই, ইত্যাদি। বাংলাদেশের সাহিত্যজগতে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট। ফলে এসব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনারও শেষ নেই। সব মিলিয়ে এই উদ্যোগ খুবই উৎসাহব্যঞ্জক।

এবার, পত্রিকার ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রথম আলোর সাহিত্য সাময়িকী আরেকটি বাছাই উপহার দিয়েছে। ১০ বছরের ১০ বই। লেখক তালিকায় আছেন সর্বজনাব হাসান আজিজুল হক, গোলাম মুরশিদ, হুমায়ুন আহমেদ, আবদুশ শাকুর, আনিসুজ্জামান, আনিসুল হক, নির্মলেন্দু গুণ, আলতাফ হোসেন, শহীদুল জহির এবং অদিতি ফাল্গুনী। বলাবাহুল্য ১০ বছরে ১০টি বই নির্বাচন করা খুবই দুঃসাধ্য কাজ এবং এরকম নির্বাচনকে সর্বতোভাবে প্রতিনিধিত্বশীল ভাবা মুশকিল। তালিকায় যাঁরা আছেন এঁদের অনেকেই ভাল লেখক। কিন্তু যারা প্রথম আলো-র এই স্বীকৃতি প্রদানের প্রক্রিয়াটি দীর্ঘদিন ধরে খেয়াল করছেন তাদের মনে এই তালিকা কিছু পর্যবেক্ষণের জন্ম দেবে। যেমন:


১. তালিকায় হুমায়ুন আহমেদ এর "জ্যোছনা ও জননীর গল্প" আছে, কিন্তু এই বইটিকে হারিয়ে দিয়ে যে বইটি প্রথম আলো পুরষ্কার জিতে নিয়েছিল ("প্রেম ও প্রার্থনার গল্প" - সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম) সেটি নেই।

২. তালিকায় শহীদুল জহির আছেন, কিন্তু শাহীন আখতার নেই। স্মর্তব্য, শাহীন আখতার-এর "তালাশ" প্রথম আলো পুরষ্কার পেয়েছিল শহীদুল জহিরকে বইকে পেছনে ফেলে।

আরো আরো প্রশ্ন হয়ত করা যায়। তবে এই ইস্যুতে প্রশ্ন জাগে: কেন প্রথম আলো পুরষ্কার পাওয়া শাহীন আখতার এবং সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের জায়গা নিয়ে নিলেন তাদের রানার-আপবৃন্দ? এটা কি কোনো কনপেনসেশন প্যাকেজের আওতায় ঘটল? নাকি প্রথম আলো এখন ভাবছে হুমায়ুন আহমেদ কিংবা শহীদুল জহিরকে রেখে শাহীন আখতার কিংবা সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকে সেরা লেখক নির্বাচন করা যথাযথ বিবেচনা ছিল না তাদের?

৫টি মন্তব্য:

অলৌকিক হাসান বলেছেন...

আনিসুল হক থাকতেই হবে প্রথম আলোর সবকিছুতে। তাই না?

যাউগ্গা আমার আপন ঘর ভিজিট কইরেন

www.aloukikhasan.blogspot.com

সুমন রহমান বলেছেন...

আনিসুল হক নিয়ে আমার সমস্যা নাই অলৌকিক। তার বই নির্বাচনে আসতেই পারে, যে কারো বইই পারে। কিন্তু আমার বক্তব্য হল, যে "জ্যোছনা ও জননীর গল্প" এক বছরের সেরা বই নির্বাচিত হবার দৌড়ে "প্রেম ও প্রার্থনার গল্প"র সাথে হেরে গিয়েছিল, সেই বই চলে এসেছে দশ বছরের দশ বইয়ের শর্টলিস্টে! আবার "প্রেম ও প্রার্থনার গল্প" বছরের সেরা বই জিতেও দশ বছরের কমপিটিশনে বাদ পড়ে গেছে তারই রানার-আপ এর সাথে!

মুজিব মেহদী বলেছেন...

এই দুটো ফলাফল তো একসঙ্গে সঠিক হতে পারে না, তাই না! হয় প্রথমআলো কর্তৃপক্ষ আগের দুটো বার্ষিক নির্বাচনে ভুল করেছিলেন, নইলে দশ বছরের সেরা নির্বাচনে এবার ভুল করলেন। খুবই জানা কথা যে তাঁরা হামেশাই ভুলভাল করেন, এবার তা স্বয়ম্প্রমাণিত হলো।

সুমন ভাই, লক্ষ করুন উপক্রমণিকার নীরিহ ভাষার দিকে। বলা হচ্ছে : "১৯৯৯-২০০৮, এই দশ বছরে অসংখ্য বই বেরিয়েছে। কিছু বই পাঠকের মধ্যে সাড়া জাগিয়েছে, কোনো কোনো বই আলোচিত হয়েছে লেখক-সমালোচকদের মধ্যে। 'সাহিত্য সাময়িকী'তে প্রকাশিত আলোচনাগুলো থেকে ১০টি বইয়ের আলোচনার নির্বাচিত অংশ প্রথম আলোর ১০ম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এই বিশেষ সংখ্যায় ছাপা হলো"। এখানে কোথাও কিন্তু বলা হচ্ছে না যে এই বই দশটি অন্য বইগুলো থেকে শ্রেষ্ঠ। ভাবখানা এমন যেন এটা অনেকটাই দৈবচয়ন। যদিও এটি খুবই স্পষ্ট যে, খুব নীরিহ গোছের একটি বিবৃতি দিয়ে অনীরিহ একটা নির্বাচন কাজই বস্তুতপক্ষে করে ফেলা হয়েছে এখানে।

আমার মধ্যে বরং অন্য একটা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। আমরা সবাই জানি, বছরের সেরা বই নির্বাচনে দেশের শীর্ষস্থানীয় লেখকদের একটা দল কাজ করে থাকেন। জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত থেকে যাঁরা সেরা লেখককে শংসাবচন পড়ে শোনান ও পুরস্কৃত করেন। কিন্তু দশ বছরের বই নির্বাচনে কারা কাজ করলেন? নাকি ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খেলেন এই হাউজের বুদ্ধিজীবীরাই?

সুমন রহমান বলেছেন...

মুজিব, প্রথম আলো-র এই নির্বাচনের প্রভাব ততদিনই জোরালো থাকবে, যতদিন সেটা "সুনির্বাচন" হবে। এখন সুনির্বাচনের সংজ্ঞা তো নাই। আর এই দেশে সাহিত্যের অন্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতির ব্যাপারে মানুষের আস্থাও নাই। প্রথম আলো-র নির্বাচনের ব্যাপারে এখনো আছে। সেটা থাকা দরকার। সেজন্যই আমি মনে করি এসব ব্যাপারে কোনোরকম বিভ্রান্তি তৈরির সুযোগ থাকা উচিৎ নয়। তাছাড়া, নির্বাচন যথাযথ না হলে এই স্বীকৃতির ওজন আপনাআপনি পাতলা হয়ে যাবে। সেটাও কাম্য নয় আমাদের। এখন নির্বাচন বাইরের বুদ্ধিজীবীই করুন কি হাউজের বুদ্ধিজীবীই করুন সমস্যা নাই, যতক্ষণ পর্যন্ত সেটা ভাল নির্বাচন, যতক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো বাছাই করা হচ্ছে। মনে রাখতে হবে, যিনি ভাল লেখক তিনি ভালই লিখবেন, আর যিনি ভাল লেখেন না তিনি তাই করতে থাকবেন, যতই আমরা বগলে ক্রাচ দিই!

নামহীন বলেছেন...

সিস্টেম তো ভালোই। সবাইরেই পুরষ্কার দেয়। হয় এইটা নয় ওইটা। প্রতি বছরের সেরা বইগুলা নিয়ে দশ বছরের শর্টলিস্ট বানাইলে আর নির্বাচকদের ক্যারিশমা দেখানোর সুযোগ কই? আর কিছু কইরা দেখাইতে না পারলে নির্বাচনে থাইকাই বা কি লাভ? তাও ভালো নিজেদের তালিকার বাইরে থেকে লিস্টি করে নাই। নাকি তাও করছে?