বুধবার, ১ অক্টোবর, ২০০৮

আমি দুঃখিত, অভিজিৎ!!

(আমার লেখা "ব্লগারের মৃত্যু ও ভার্চুয়াল শোকের চেহারা"কে উপলক্ষ করে মাননীয় অভিজিৎ রায় সচলায়তনের পাতায় আমার চরিত্রহননে কিঞ্চিৎ বাক্যব্যয় করেছেন। এই উপলক্ষে আমারো মনে পড়ল আমাদের পুরনো মোলাকাতের কথা। "পুরনো ক্ষতের দাগ আলো আবছায় হাসে"... বন্ধু মাহবুব পিয়ালের কবিতার লাইন। আবার "ক্ষতস্থান সেরে গেলে পুনর্বার তাতে রোম গজায় না" সেটি জানিয়েছিলেন বিনয় মজুমদার। রোম যে গজায় নাই তা আজ এতোদিন পরে টের পাইলাম। সেই অবকাশে ওয়েব খুঁজে কবিসভা থেকে পুরনো একটি লেখা পাওয়া গেল।)

অভিজিৎ রায়ের আলোচনা ও রেফারেন্স পড়লাম।

এক নম্বর পয়েন্টে তিনি আমার সাথে ঐকমত্য পোষণ করলেন দেইখা আরাম পাইলাম। অর্থাৎ তিনিও মনে করেন বুদ্ধিবৃত্তিক তর্কের মধ্যে ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ গুলায়া না ফেলাই উচিৎ।

দুই নম্বর পয়েন্টে তিনি আমার লেখার মধ্যে একটা ‘ভুল তুলনা’ খুঁইজা পাইছেন। অর্থাৎ, তার মতে, ধর্মগ্রন্থনির্ভর ধর্মীয় শাসনের সাথে গ্রন্থহীন সেক্যুলার শাসনের তুলনা হৈতে পারে না। মোটা হরফে লিখছেন, সাদ্দামের এট্রোসিটিকে জাস্টিফাই করে...এমন কোনো নীতি সেক্যুলারিজমে নাই।

এইখানে আইসা মানসের মত আমারও সন্দেহ হৈল। তিনি কি এই অধমের লেখাটি পড়েছেন ঠিকমত?

অভিজিৎ, আপনে খেয়াল করলে দেখবেন যে, আমি মূলত সেক্যুলারিজমের প্রাক্সিস-এর দিকটাই আলোচনা করতেছিলাম, যেহেতু, আমার জানা মতে, সেক্যুলারিজমের কোনো সর্বজনীন মূলনীতি কেউ লিখ্যা যান নাই। সেক্যুলারিজম শেষপর্যন্ত কিছু প্রাক্সিসেরই সমষ্টি। মডার্নিজমের একটা কম্পোনেন্ট হিসাবে এই বিষয়টা পশ্চিমে বিকশিত হৈছে রাষ্ট্রকে ধর্মীয় প্রাতিষ্ঠানিকতা থিকা উদ্ধার করার জন্য। কিন্তু, আমি বলতেছিলাম বাস্তবে কী হৈছে সেই কথা। বলতেছিলাম, সেক্যুলার রাষ্ট্রের বাতাবরণে থাইকাও রাষ্ট্রনায়কেরা যেভাবে বিধর্মী নিধন করছেন সেই কথা। তখন কিন্তু, মহান পশ্চিম, সেক্যুলার রাষ্ট্রের এইসব আচরণকে নন-সেক্যুলার আখ্যা দেয় নাই।

তারপরে, অনেকটা উপযাচক হৈয়া, জনাব অভিজিৎ একটা লিংক দিলেন, যাতে এই কবিসভার নাদান সদস্যরা বিশ্বাস, দর্শন ও ডগমার পার্থক্য ‘ভালমত বুঝতে’ পারে। আমি সেই লিংকে কিক করলাম। পাইলাম জনৈক অপার্থিব জামানের কিছু সংজ্ঞা। পইড়া বুঝতে বুঝতে আমারতো সংজ্ঞাহীন হৈবার দশা!

সংক্ষেপে বলি:

অপার্থিব ‘বিশ্বাস’ কে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়া লিখছেন 'ফেইথ' হৈল 'পারসনাল বিলিফ'.....। বাদবাকি পড়ার ধৈর্য আমার আর হয় নাই। ভাই অভিজিৎ, এইটারে টটলজি কয়, বাংলায় বলা যায়, পুনরুক্তিদোষ। ফেইথ হৈল বিলিফ! বাহ্! তারপরে আবার ‘পারসনাল’!! অর্থাৎ কোনো জনগোষ্ঠী, যেমন ধরেন ধীবর, যখন নদীর দেবতায় বিশ্বাস করে, তখন সেইটারে কিন্তু ‘ফেইথ’ কওয়া যাইব না! যেহেতু ‘পারসনাল’ না! চমেৎকার!!

অতঃপর ফিলসফির সংজ্ঞা। এইখানেও ‘পারসনাল’ আছে, সেই আলোচনা বাদ দেই, নাইলে আমার হালায় আবার টটলজি হৈয়া যাইব! ঐখানে বলা হৈছে, ফিলসফি হৈল অ্যা পারসনাল ভিউ অ্যাবাউট রিয়েলিটি....! আবার ধৈর্যহারা হৈয়া গেলাম। রিয়েলিটি কি জিনিস? যেসব বিষয় নন-রিয়াল (যেমন ঈশ্বর) সেসবের পারসনাল ভিউ তাইলে ফিলসফি হয় না? আমার রীতিমত মূহ্যমান অবস্থা!

শেষ চেষ্টা করার আর সাহস হৈল না। মাফ কৈরেন ভাই!

সাজ্জাদ শরিফ প্রায়ই বলেন, আমাদের দেশের ফিলসফিচর্চার দূরবস্থার কথা। এক্ষণে প্রমাণ পাইলাম।

..........................

বাকি থাকল, অভিজিৎ, আপনের লেখা, সেইটাও পড়লাম। আপনের লেখায় ফরহাদ মজহারের বিরূদ্ধে আপনের উত্তেজনাটাই শুধু ঠাহর করতে পারলাম। আপনের দর্শন অপার্থিব জামানের চেয়েও ভীতিকর। আপনে লিখছেন, প্লেটোর ‘অতীন্দ্রীয় রহস্যবাদী ভাববাদ’! কী জিনিস সেইটা?

এখন আমি বুঝতে পারতেছি না, কেন আপনে আমার সাথে একমত হৈলেন? আমি কৈছিলাম, ফরহাদ মজহারকে মোকাবেলা করা দরকার বুদ্ধিবৃত্তির জায়গা থিকা। আপনেও সায় দিলেন। কিন্তু আপনের লেখা পইড়া আমার মনে হৈল, ঠিক এই ধরনের চিন্তাহীন বিরোধিতার বাইরে থেকে আমি বিষয়টা দেখতে চাইছিলাম। আমার বক্তব্য রূঢ় শোনাইলে আমি দুঃখিত অভিজিৎ।


কোন মন্তব্য নেই: