শনিবার, ৩০ আগস্ট, ২০০৮

পাগলা ভক্তের ধাওয়া!!


কবিসভায় ব্রাত্য রাইসু এবং আমি (ইমরুল এবং ভাস্করও) দুয়েকটি বিষয় নিয়া তর্ক করিতেছিলাম। আমরা পরস্পরের কিছু কিছু বিষয়ে একমত আর কিছু কিছু বিষয়ে দুইমত হইতেছিলাম। তাতে অনেক বিষয় আমার নাদান-চক্ষে পরিষ্কার হইবার সুযোগ পাইতেছিল, মান্যবর রাইসু-ও তর্কটিকে উপভোগ্য বইলা সায় দিতেছিলেন।

কিন্তু পাগলা ভক্তের মন ইহাতে মানিবে কেন?

ভক্তের মন তাই নানান মোক্ষম কৌশলের আশ্রয় খুঁজিল। একজন বেনামে সুমন রহমানের ভক্ত সাজিলেন। বিপরীত লিঙ্গের এই চরিত্রটি আমার কাছে সুমন রহমানের অনেক লেখা বিষয়ে আপ্লূত প্রশংসা করিলেন, যাতে আমার মহিলাবাঞ্ছা আর ভক্তবাঞ্ছা দুইটাই পুরা হয়। অনেক ইনায়া বিনায়া শেষে তিনি আমার ঠিকানা ও টেলিফোন নম্বর চাহিলেন। কিন্তু ততক্ষণে আমি আমার জানের ওপর খতরা টের পাইয়া গিয়াছি। তাই দরজায় রসুনের মালা ঝোলাইয়া হাতে ক্রুশ লইয়া বইসা রহিলাম। কোনো সাড়া দিলাম না। ফোন নম্বর দিলাম না। এরপর সেই ভক্তের প্রশংসা ক্রমে নিন্দায় পর্যবসিত হইতে থাকিল। স্বস্তি পাইলাম। মনে হইল এই যাত্রা ফাঁড়া কাটিয়া গেছে। বন্ধ দরজার ওপারের মোহনীয় হাসিখানি অবশেষে গগনবিদারী প্রেতচিৎকারিণীরূপে পাহাড়েপর্বতে প্রতিধ্বনি তুলিয়া বিদায় নিলেন।


স্ত্রীজাতীয় আরেকজন নিজনামে কবিসভার যৌথ ডাকবাক্স থিকা আমার ব্যক্তিগত মেইলবাক্সে আছর করিলেন। তিনি আসিলেন এক ‘ভয়ংকর’ ভালবাসার পয়গাম লইয়া। আমাকে নানান বিষয়াদি জিজ্ঞাস করিলেন, যথা: আমি বিবাহিত কি না, আমি দেখিতে ‘উত্তেজক’ কি না, ইত্যাদি। তিনি আমাকে লম্বা লম্বা চিঠি লিখিতে লাগিলেন এবং আমাকেও সেইমত আদেশ করিলেন। কিন্তু আমি একজন ভীতুবিবাহিত মানুষ বিধায় উনার উদাত্ত ডাকে সাড়া দিবার পারি নাই। শেষে আমার ‘অক্ষম’ পুরুষত্বে কুপিত হইয়া তিনি নিজ অভিসন্ধি সরাসরি প্রকাশ করিলেন: আর কোনোদিন যদি আপনি রাইসুরে.......

ইমেইল বাক্স খুলিলেই এইসব ভয়ংকর ভয়ংকর সব হুমকিতে ভরা চিঠি দেখিতে পাই, শেষে মনের দুঃখে ইমেইল ছাইড়া এমএসএন চ্যাটবাক্সে গিয়া ঢুকিলাম। সেইখানে ঘাপটি মাইরা ছিলেন আরেকজন, আমাকে দেখিবামাত্র একখানি জল্লাদের ইমোটিকন দেখায়া ভাগায়া দিলেন। আমি খাবি খায়া পলায়া যাইবার প্রাক্কালে তিনি আবার পেছন পেছন দুইখান ভাইরাস লেলাইয়া দিলেন। ইহার একটি লাগিল আমার কম্পিউটারের উইন্ডোজে। কম্পিউটার ক্র্যাশ করিল। আরেকটি লাগিল আমার ইমিউন সিস্টেমে। আমিও ক্র্যাশ করিলাম।

ভাবিলাম, ভালই হইল একদিকে, পাগলা ভক্তের মন শান্ত হইবেক। আমি ও আমার কম্পিউটার চুপচাপ পইড়া থাকি, মুক ও বধির ইস্কুলে যাওয়া-আসা করি বরং!!

কিন্তু টেলিফোন নামক আরেকটি যন্ত্র যে আছে এই জগতে! সেইখানে হানা দিলেন আরেকজন। বলিলেন, দেখছেন নাকি, আপনেরে নিয়া চিঠি লিখছে আইজগা....

তখনও দেখি নাই। পরে ল্যাচড়াইতে ল্যাচড়াইতে এক সাইবার ক্যাফেতে গিয়া দেখিলাম আরেক ভক্ত। টিপু সাহেব লেখছেন। ভালই লেখছেন। আমার বলিবার কিছু নাই। কারণ উনার স্কুলবিতর্কমার্কা বক্তব্যের উত্তরে আমার যা বলার তা আগের চিঠিতেই বলা আছে। সাশ্রয় করি বরঞ্চ!

একটা প্রস্তাব নিয়া ভাবিতেছি। রাইসু একদা নিন্দাসভার ডাক দিয়াছিলেন। তখন আমি অন্যরকম তর্কে মজিয়াছিলাম। এখন মনে হইতেছে নিন্দাসভা না হইলেও একখানি ভক্তসভা তৈয়ার করা অত্যন্ত জরুরি। যাবতীয় ভক্তকুলের একটা জন্য অভয়ারণ্য খুলিয়া দিলে উনারা যেমন নিজ নিজ আইকনদের ধামা ধরিয়া স্বচ্ছন্দে বিহার করিতে পারিবেন, তেমনি আমাদেরও অনেক তর্কসাশ্রয় হইয়া যাইবে।




ঢাকা, ৩১ মে ২০০৫


কোন মন্তব্য নেই: