বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০০৮

আসলে এইটা একটা লাঁকানিয়ান এনালিসিস হৈয়া উঠতে পারতো

জয় গুরু সুবিমল!! আসেন, শুরুতে দুইটা নির্ভেজাল কোটেশন খেয়াল করি:

১.
ঘটনা আর রটনায় পার্থক্য অনেক থাকে, জানি। একবার এক অধ্যাপকের সাথে সশরীর সাাতে তিনি জানাইলেন যে বৈদেশের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পড়াইতেছেন। শিক। পরে অন্য সূত্র থিকা জানলাম সেইখানে তিনি ডক্টরাল/পোস্ট-ডক্টরাল রিসার্চ করতেছেন। অর্থাৎ, এক অর্থে, ছাত্র। এখন আমার কী করার আছে?
সুমন রহমানের পোস্ট, বাড়ির (এত) কাছে আরশীনগর!

২.
শুরু করছিলাম ব্যক্তিগত কটাক্ষ নিয়া। সেই কথাটারেই এইবার খুইলা কই। সুমন এই প্রসঙ্গটা দিয়াই তার আলোচনার ইতি টানছেন, আমি সেইখান থিকাই শুরু করতে চাই। ওইখানে কোনো এক অধ্যাপকের গল্প শোনাইলেন তিনি। আজিজ সুপার মার্কেটে নাকি তার লগে দেখা হইছিল। ভালো কথা। কিন্তু সোজা-সাপটা কথা কইবার সাহসটুকুও সুমন অর্জন করতে পারলেন না। তা না হইলে কোন অধ্যাপকের লগে দেখা হইছে তার নামটা কইতে বাধলো ক্যান? ঠিক আছে, মনে কইরা দেই। সুমনের লগে এক সন্ধায় এই অধম অধ্যাপকেরও দেখা হইছিল। সুমনের লগে তখন কবি ব্রাত্য রাইসু আর আমারই প্রিয় ছাত্র কবি রাদ আহমদও ছিলেন। আমিই আপনার লগে প্রথম সাক্ষাতে পরিচয় হওনের সময় কইছিলাম তাইওয়ানে পড়াই। এইবার নিশ্চয়ই সুমনের অধ্যাপকের নামটা মনে পড়বো?
মাসুদুজ্জামানের পোস্ট, খেলারাম খেলে যা!

এইবার চলেন একটু প্লানচ্যাট বাক্সটা খুলি। মহান জাক লাকাঁ আছেন লাইনে:


আমি: লাকাঁ জি, আপনের কাছে একটা নালিশ লৈয়া আসছি। ঐ যে, ড. মাসুদুজ্জামান, তাইওয়ানের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, উনি আমার সাইকো অ্যানালাইসিস কৈরা ফালাইছেন! এখন কী করি?

লাকাঁ: উনি তো সেইটা করতেই পারেন, কপিরাইট নাই এই কর্মের। তাতে সমস্যা কী হৈল?
আমি: উপরের কোটেশন দুইটা একটু খেয়াল করেন....
(খানিক নীরবতা। দীর্ঘশ্বাস)
লাকাঁ: হুম... খেয়াল করলাম। দাগাইছেন কী আপনে?
আমি: জ্বি।
লাকাঁ: হুম... আপনে আজিজ মার্কেটের নাম কন নাই, কিন্তু উনি পাইলেন কৈত্থিকা? আপনেগো ‘ব্যাংলাডেশে’ কি একজনই বৈদেশে অধ্যাপনা করেন নাকি? এক মাসুদুজ্জামানই সম্বল?
আমি: সেইটাই তো আমি আপনেরে জিগাইতে চাইতেছি... কম সে কম হাজার খানেক তো আছে, বৈধ অবৈধ মিলায়া।
লাকাঁ: আমারে জিগাইয়া ফায়দা নাই। এইবার আপনেই উনার সাইকো-অ্যানালাইসিস কৈরা ফালান। টেক্সট তো আপনের সামনেই হাজির আছে।
আমি: আপনে অভয় দিলে করি। একটু খেয়াল কৈরা দ্যাখেন, আমি একটা এক্সাম্পল দিছিলাম। তার সাথে আমার কৈ দেখা হৈছে আমি সেইটা বলি নাই। কিন্তু মাসুদুজ্জামান ঠিকই আজিজ সুপার মার্কেট খুঁইজ্যা পাইলেন আমার লেখার মধ্যে। সরিষার মধ্যে যেমনে কৈরা ভুত দ্যাখে কেউ কেউ। বা দৈ-এর মধ্যে চুন।
লাকাঁ: চালায়া যান....
আমি: দ্বিতীয় বোল্ড অংশটা খেয়াল করেন.... উনি বলতেছেন আমি-ই .... যেন উনি ছাড়া ত্রিভুবনে আর কোনো বঙ্গীয় প্রাণী নাই যে বৈদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করে না, এবং যার সাথে ঢাকা শহরে আমার দেখা হৈতে পারে না। ....ই-প্রত্যয় বড় ভয়ানক!

লাকাঁ: কিছু একটা দাঁড়াইতেছে মনে লয়... আচ্ছা, সেকেন্ডারি ডাটা কি আছে, মানে উনার বিষয়ে, আপনের অভিজ্ঞতা ছাড়া....?

আমি: একটা কবিতা আবৃত্তি করতে পারি। ব্রাত্য রাইসু লিখিত...কবিতার নাম ড. (গলা খাকারি দিয়া আমি কবিতাটা পড়তে আরম্ভ করি)

এই নিখিল টেক্সটের সারি
যাহাকে মুগধ করে
তাকে দ্যাখো নিমীলিত নেত্রে ঐ
রয়েছে দাঁড়িয়ে। তাঁকে
বলো ন্যারেটিভ। বলো বাংলা কবিতার
তাবৎ সমস্যা -

তিনি এক বাক্যে - যাহা অতি দীর্ঘবাক্য - বুঝিয়ে বলবেন সব
তোমরা সব মন দিয়ে
শুনো। কোনো আলতুফালতু প্রশ্নট্রশ্ন
জিজ্ঞেস কোরো না। তিনি ডিসটার্বড হবেন। তাঁকে
বলো - হে ডক্টর তিনি মাসুদুজ্ঝামান

দুই বাংলা কবিতার।

লাকাঁ: দুইজনই কি একই ব্যক্তি?
আমি: জ্বি জ্বি। একই ব্যক্তি। বিলকুল এক।
লাকাঁ: হুম। টিপিক্যাল কেইস। আপনের কনকুশন কি?
আমি: কনকুশন, একটু রেটরেকলি কৈলে, এই নিখিল টেক্সটের মিছিলে উনি কেবল উনারেই দেখতে পান। ফলে অন্য আরেকজন অধ্যাপকের দৃষ্টান্ত হাজির কৈরা উনার ইগো-রে তিগ্রস্থ করা আমার উচিত হয় নাই। কবিতার সতর্ক বাণী আমি মানি নাই.... আমি তারে ডিসটার্ব করছি। নানান আলতু ফালতু প্রশ্ন ট্রশ্ন করছি....
লাকাঁ: সেই সব প্রশ্নের উত্তরে কী কৈলেন তিনি/?
আমি: প্রথমে ঐ দৃষ্টান্তকে ব্যক্তিগত কটা হিসাবে গায়ে মাখায়া নিলেন। এতে উনার পাল্টা কটা করবার অধিকার জায়েজ হৈল। তারপর বহুবিধ ভূষণে আমারে ভূষিত করলেন। যেমন: ১. আমার রাষ্ট্রবিজ্ঞান জ্ঞান অতি (অ)প্রখর, ২. আমি উগ্র জাতীয়তাবাদী, ৩. আমার সোজাসাপটা কথা কৈবার সাহস নাই ৪. আমি হাটহাজারি মার্কা বাজারি গল্প বৈলা সিরিয়াস বিষয়কে নষ্ট কৈরা দেই, ৫. ব্যক্তিগত কটারে আগে নিজের দিকে একটু তাকাইতে হয়, ৬. আমি উনার মূলকথা না ধৈরা ছোবড়া ধৈরা টানাটানি করছি... ইত্যাদি ইত্যাদি।
লাকাঁ: অদ্ভূত বিষয়... উনি কি উনার বক্তব্যের মধ্যে ছোবড়াও রাখেন?
আমি: (স্বগত) আমি তো খালি ছোবড়াই দেখলাম!
লাকাঁ: কী কৈলেন?
আমি: না কিছু না। ভাবতেছি উনারে আমার ‘ডিসটার্ব’ করা একদমই উচিত হয় নাই। অধ্যাপক মানুষ। খালি খালি উনার গালি খাইলাম!
লাকাঁ: যাক...বড়দের গালাগালি খাওনের প্রথা তো আপনেগো দেশে আছেই।
আমি: তা আছে।
লাকাঁ: আর কোনো অগ্রগতি খেয়াল করলেন... ইতিবাচক কিছু?
আমি: কিছু কিছু। তবে সেইগুলারে এমন সুন্দর পলেমিকসের মোড়ক দিয়া মোড়াইছেন তিনি, যে পড়লে মনে হবে ঐটাই বুঝি উনার সবসময়ের পজিশন। দুয়েকটা বলি:
১. উনি এখন ভিসামুক্ত বিশ্ব আন্দোলনের পতাকা নামায়া ফেলছেন।
২. জাতিরাষ্ট্রহীনতার কথাও আর বলতেছেন না তিনি।
৩. মৌলবাদ আর মৌলবাদ বিরোধিতার চক্করে জাতি খাবি খাইতেছে বৈলা উনি যে আগের পোস্টে হাহুতাশ করতেছিলেন, এইবার ক্রুসেড আর জিহাদ-এর দিকে কবিসভার পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ কৈরা আগের পাপের প্রায়শ্চিত্ত কৈরা নিছেন।
লাকাঁ: তাইলে তো হৈলই। আর কিছু কৈবেন?
আমি: উনার এই অগ্রগতিতে আমি অনেক খুশি। তবে শেষ পোস্টের শেষ প্যারার প্রথম বাক্যটা একটু খেয়াল করেন।... তবে আমি এখনও অত্যন্ত জোর দিয়া বলি........... এইভাবে শুরু হৈছে বাক্যটা।
লাকাঁ: এর মাজেজা কি?
আমি: এই ‘এখনও’ শব্দের একটা গোপন ঢোঁক গিলা আছে, টের পাওয়া যায়। অর্থাৎ, যুক্তি না পাইলেও জেদ চালায়া যাইবেন তিনি। মিলুক আর না মিলুক, ছিল্যা ফেলবেন!
লাকাঁ: সমস্যা কি? উনারে চালায়া যাইতে দেন।
আমি: ফি আমানিল্লাহ!
লাকাঁ: আরেকটা কৌতুহল। আপনে এইসব কথা শোনাইতে আমারে ডাকছেন ক্যান?
আমি: আর কাউরে ফ্রি পাই নাই বৈলা। মার্ক্স-এঙ্গেলস থিকা ধৈরা এডওয়ার্ড সাঈদ পর্যন্ত বুক কৈরা ফালাইছেন উনি। সবার লাইন এনগেজড। আপনের নাম নিতে মনে হয় ভুইল্যা গেছিলেন। সেই চান্সে...... হ্যালো, হ্যালো!!!

(এইখানে প্ল্যানচেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হৈয়া যায়)

সিঙ্গাপুর ১৯/৮/৬



কোন মন্তব্য নেই: