বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০০৮

অমরতার চেয়ে সত্য

তোমার অন্তর্ধান সকাল দশটার যাদুকরী রোদের ভেতর
অতএব মেনে নিই এই বিরহ মাত্র কয়েক ঘণ্টার

এটুকু সময়ের মধ্যে ঘুরে আসতে হবে অনেকগুলো উপদ্বীপ
অনেকগুলো পাহাড়ি খাড়ির তলদেশের মাটির নমুনা পাঠে
জেনে নিতে হবে কেন মহাদেশগুলো পরস্পরের কাছে ক্রমশই
অসহনীয় হয়ে উঠছে
জানতে হবে ঝাউয়ের একটিমাত্র প্রজাতিই কেন ক্রন্দনশীল!

এসব প্রশ্নের তাপমাত্রা ছিল হিমাঙ্কের অনেক নিচে, ফলত বাতাসমাত্রই শৈত্যপ্রবাহ, আমরা নৈকট্য বোধ করতাম। অর্থাৎ আমার মহিষের চামড়া-টানানো-আকাশের নিচে তোমার চকিত লাবণ্য! আমাকে জানতে হত যা কিছু ঘটেছে এবং যা কিছু ঘটে নি, তাই আমি জানতাম কার্যকারণ হচ্ছে যাবতীয় অভিজ্ঞতার প্রধান মুদ্রাদোষ। তবু যখন:

দেশান্তরী তুতসীদের দেখে তোমার কান্না পেত, আমি আশ্বাস দিতে গিয়ে
বলেছিলাম, দশ হাজার বছর আগে মহাসমুদ্রে ভেসে-বেড়ানো এক ছন্নছাড়া
মহাদেশের নাম আফ্রিকা।

বিচ্ছিন্নতাবাদ তোমার পছন্দ নয়, কিন্তু চাঁদের বিচ্ছেদ কি তোমাকে উপহার
দেয় নি একটি অতলান্তিক সমুদ্র!

তাছাড়া, অনেকবার বলেছি, তালব্য-শ’ লিখতে গিয়ে তুমি কতটা যতœশীল,
এ থেকে বোঝা যায় তোমার যৌবন ঠিক কতখানি ফুটেছে!

আমি ভয় পাই সেসব কথা যা তোমাকে বলা হয় নি, এরা আমাকে দিয়েছে
অনিদ্রা আর আনন্দ, খুব সপ্রতিভ কোন আড্ডার মর্মমূলে এরা থেকে গেছে
পিত্তথলির পাথরের মত নীরব ও বিস্ফোরণোন্মুখ হয়ে...


যেমন, ধরা যাক, ভেড়াদের আমি ভালবাসি তাদের পর্যটকসুলভ পেশাদারি
নির্লিপ্তির জন্যে, এবং জেনেছি হস্তীছানার জলক্রীড়া নিজ-প্রতিবিম্ব-দর্শনে
অনীহা ছাড়া আর কিছু নয়।

এসব বিষয়ে নিশ্চিত হতে গেছি। সেখানে দেখেছি
গোলকধাঁধা তৈরি করেছে তোমার চুজোড়া
আহ্লাদী হয়ে উঠেছে তোমার স্তনবৃন্ত
তোমার কুন্তলরাশি ঝপাৎ বৃষ্টিপাতের মত
আমাকে লুকিয়ে ফেলেছে
যাবতীয় চিন্তাশীলতার কাছ থেকে


ভাবলাম, আমি বোধহয় সূর্যকলসের ফাঁদে-পড়া দার্শনিক পতঙ্গমাত্র
জানা নেই ভূবনচিলের পা কেন খুঁজে ফিরে গগনশিরীষ শাখা
মফস্বলী কাকের কেন চাই এলুমিনিয়ামের এণ্টেনা

অনিবার্য এবং অবোধ্য, স্বাভাবিক কিন্তু গাণিতিক নয়

বরং জরুরি বেলা একটায় তোমার ফিরে আসা
মিনিট-স্থায়ী পুনর্মিলন, সমগ্র জীবনের
যৌথতার চেয়ে সত্য
অমরতার চেয়ে সত্য অমরতার দিকে যাওয়া



কোন মন্তব্য নেই: