শুক্রবার, ২২ আগস্ট, ২০০৮

কবিসভার মডারেশন বিষয়ে

[কবিসভায় একবার মডারেশন প্রসেস নিয়া বেশ তর্ক হয়। সেলিম রেজা নিউটন ও সজল খালেদ এ বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে তাঁদের মতামত ব্যক্ত করেন। এই প্রেক্ষিতে আমার নিচের লেখাটি পোস্ট হয় ২০০৫ সালের ১৮ আগস্ট।]


ব্রাত্য রাইসুর মডারেশন-পদ্ধতি তথা পুরো মডারেশন প্রসেস নিয়াই কথা উঠছে।

সেলিম রেজা নিউটন অনেক কথা বলছেন। তিনি ক্ষুব্ধ, ক্রুদ্ধ। আজকাল অনেক পাবলিক ফোরামেই উনার ক্ষোভ, প্রশ্ন, অভিযোগ, ক্রোধ প্রকাশ পাইতে দেখতেছি। কবিসভার মডারেশন নিয়া উনি যে খুব ভাবিত সেইটা উনার পত্রে পরিষ্কার বোঝা যায়। শুধু উনার ভাবনা নয়, অন্যরা সে বিষয়ে ভাবিত না বৈলা তিনি (এবং সজল খালেদ) তাদের ওপরও নাখোশ। তার ওপর নিউটন আবার এই সাইলেন্ট শ্রেণীকে ‘রাইসুর পছন্দের মানুষ’ আখ্যা দিছেন। এখানে একটা কথা:


ভাই নিউটন/সজল, আপনের যেমন কোনো বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানানোর অধিকার আছে, তেমনি আরেকজনেরও তো সে বিষয়ে প্রতিক্রিয়া না-জানানোর অধিকার আছে। আবার আপনে যে বিষয়কে নিন্দাযোগ্য ধিক্কারযোগ্য মনে করতেছেন, সেইটা অন্যজনে নিন্দাযোগ্য/ধিক্কারযোগ্য মনে নাও করতে পারে। নয় কি? আগেভাগেই অন্যের নীরবতার ভাষ্য তৈয়ার কৈরা আপনে কি নিজের জ্যোতিষশাস্ত্রীয় দতা জাহির করলেন?

তাইলে? আপনের উত্তাপে আপনে উত্তপ্ত হন, মডারেটররে উত্তপ্ত করেন, উনার চৌদ্দগুষ্ঠিরে উদ্ধার করেন. কিন্তু আমাদের নীরব থাকনের অধিকার নষ্ট করতে চাইতেছেন ক্যান? আমরা যখন নানাবিষয় নিয়া কথা কৈবার চেষ্টা করছি, ঝগড়াবিবাদ করছি, তখন তো আপনেরে টাইনা হেঁচড়ায়া নামাইতে চেষ্টা করি নাই। করছি?

আপনি কৈবেন, এইটা একটা জাতীয় জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। মডারেশন। তাইলে? একটা বিষয়ের ওপর আপনের/আপনাদের ভ্যালু এডিশন এবং সেইমত আমাদের নীরবতার ওপর হামলা কি গণতন্ত্র এবং পরমত সহনশীলতার নর্মস মাইনা চলতেছে? ভাইবা দেখেন তো?

যাক, আমাদের অংশগ্রহণ না করার অধিকার ছিল, আপনেরা সেইটা জব্দ করলেন।

অংশগ্রহণ করি।

ইয়াহু গ্রুপের মডারেশন নিয়া অনেকেই মূল্যবান তথ্য জানাইছেন। কিন্তু আমি আরেকটু নন-টেকনিক্যালি ভাবতে চাইতেছি। কবিসভায় যোগদানের আমন্ত্রণ জানাইছিলেন মডারেটর। উনার পজিশনটা মাইনা নিয়াই আমি এইখানে যোগ দিছিলাম। আমি (বা যে কেউ) যখন এইখানে যোগ দেই, সেইটা এইজন্যই দিছি যে, এইখানে যারা আছেন তাদের সাথে আমার যোগাযোগ খুব ফলদায়ক এবং প্রীতিকর হবে, এবং এর মডারেটর-সহ অন্য অনেক সদস্যের সাহিত্যবোধকে আমি অনুমোদন করি।

আরেকটা বিষয়। নিউটন বলছেন, কেউ যদি খারাপ চিঠি লেখে তাইলে জনমতের ভিত্তিতে তারে বহিষ্কার করলেই তো হয়। হয় নিউটন? ভাবেন তো, আপনেরে আমি একটা খারাপ চিঠি লেখলাম। সেইটা পাওয়ার পরে সভা আমারে বহিষ্কার করল। কিন্তু ঐ খারাপ চিঠি পইড়া আপনের যে মনমেজাজ বিলা হৈল, সেইটার এলাজ কেডা করব। সেইটার কমপেনসেশন কি? সেই চিঠি অবগত হওনের অপরাধ আপনে করছেন কি না?

উদাহরণ দিই: নিউটনের চিঠির প্রতিক্রিয়া জানাইতে গিয়া পূর্বা নিউটনের বিশ্ববিদ্যালয়-শিকতা এবং পেশাগত সময়পেণের ধরন লৈয়া যে মন্তব্য করলেন, সেইটাও কি খুব শোভন হৈছে? এণে পূর্বার অবগতির জন্য একটা তথ্য দিই: আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্যান্য সরকারি শিাপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারী বেতনভাতা রেভিনিউ বাজেট থিকা দেয়া হয়; অর্থাৎ দেশের জনগণ যে ট্যাক্স দেয় সেইটা। আপনের ট্যাক্সের পয়সা যেইটা আমেরিকা থিকা খয়রাত হিসাবে আসে সেইটা থিকা বিশ্ববিদ্যালয় শিকের বেতন দেয়া হয় না। আর কে জানে, আপনেও যে-বেতন থিকা ট্যাক্স দিতেছেন, সেইটা ইরাকের তেলবেচার পয়সা কিনা!

এইটা নিশ্চয়ই মডারেটরের হস্তক্ষেপের জায়গা ছিল। কিন্তু ভাই নিউটন, আপনেই তারে সেইটা করতে নিরুৎসাহিত করলেন।

এখন আপনে ঐ চিঠি পইড়া বিলা হৈয়া মুড-অফ কৈরা বইসা থাকবেন, আর কবিসভায় আমরা ভোটাভুটি করুম। বাহ!!!!!!!

এইজন্যই গণতন্ত্ররে মার্কস কৈছিলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বেচ্ছাচার !

মোটকথা হৈল, রাইসু এই সভার মডারেশন করতে গিয়া উনার ব্যক্তিগত রূচি দিয়াই চালিত হৈতেছেন। আমি সেইটার পক্ষে। কেবল রাষ্ট্রীয় প্রশ্নে আপনেরা নিরপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান রাখেন, দয়া কৈরা একটা সাহিত্যিক ফোরামের ওপর এই গুরুভার চাপাইতে যায়েন না। মডারেটর যদি যুক্তিহীনভাবে চলেন, তবে উনারে তুলোধুনা করনের ব্যবস্থা এই ফোরামে আছে। আর সেই যুক্তির যথার্থতা সমষ্টি মাইনা করা লাগব এমনও না। কেউ ব্যক্তিগতভাবেও সেইটা হাজির করতে পারেন। অন্যরা সরবে বা নীরবে সেইটারে সমর্থন জানায়া যাইতে পারেন। আমার মনে হয়, এইভাবে আমরা সমষ্টিরে বাড়তি দায়িত্ব থিকা রেহাই এই ফোরামরে চলমান রাখতে পারি।

যন্ত্রশাস্ত্রে একটা নীতি মানা হয় : যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো জিনিস চলতে থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত সেইটার ট্রাবলশুট না করা। (চমস্কির যে কথা নিউটন উদ্ধৃত করছিলেন, সেইটার প্রিমাইজ হিসাবে আমি এইটা উদ্ধৃত করলাম)।

কবিসভা চলতেছে। সভার মডারেটর সাহেবের ‘স্বৈরনীতি’ এবং ব্যক্তিগত পছন্দ/অপছন্দ আমাকে অন্তত আমার বক্তব্য প্রদানে কোনো হ্যাম্পার করতেছে না। কারো যদি করে, সেইটা তিনি ফোরামে শেয়ার করতেই পারেন (করতেছেনও), সেইটা নিয়া অন্যরা আলোচনাও করতে পারেন, সেই আলোচনা থিকা মডারেটর লেসনও নিতে পারেন, তবে সেই বিষয়ে আমি একটা পদ্ধতিগত সংবিধান প্রণয়নের বিপক্ষে।


২টি মন্তব্য:

সেলিম রেজা নিউটন বলেছেন...

সাবাস সুমন রহমান! পুরো পরিপ্রেক্ষিতটাকে হাওয়া করে দিয়ে এভাবে রচনা পোস্ট করার বিদ্যাপদ্ধতি সত্যি অসাধারণ! আপনাকে বুঝতে আমার সাহায্যই হলো বৈকি।

সুমন রহমান বলেছেন...

নিউটন, প্রায় এক বছর পর ব্লগস্পটে লগইন করে দেখি আপনার এই মন্তব্য মডারেশন চ্যানেলে অপেক্ষা করছে। মার্জনা করবেন বিলম্বের জন্য।

এবার আমাকে বোঝার ব্যাপারে আপনাকে আরো সাহায্য করি: প্রেক্ষিতের কথা বলছিলেন। ঠিক। এটা সমস্যা বটে। কিন্তু আপনাদের অনুমতি ছাড়া আপনাদের লেখা আমার ব্লগস্পটে তো আপ করতে পারি না। আর যেহেতু তর্কটা ছিল কবিসভায় (ওটা ব্লগ নয়, ইমেইল গ্রুপ হওয়ায়), ফলে লিংক পদ্ধতি কাজ করে না। সেসময় (যদ্দূর মনে পড়ে) আমি খুঁজে খুঁজে আমার পুরানা টুকিটাকি লেখার আর্কাইভ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তারই ফলশ্রুতিতে এই ক্রিয়া।