বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০০৮

মুদ্রার দুইপিঠেই যখন মৌলবাদ!

আমার ‘জাতীয়তাবাদে’ উগ্রতা দেখছিলেন ড. মাসুদ ভাই, এইবার আরো এক কাঠি বাইড়া আমার পরম পূজনীয় প্রবাসী বড়ভাই সুব্রত সেইখানে আবিষ্কার করলেন সাদা পোশাকধারী মৌলবাদ। কারণ?

১. আমি আমার আরেক বড় ভাই কবি সাইফুল্লাহ দুলালের বিদেশগমনের পদ্ধতি নিয়া নীতিগত আপত্তি তুলছিলাম।
২. বড় ভাই মাসুদের ‘যুক্তি’র জবাবে রেটরিক হৈয়া উঠছিলাম যা প্রকারান্তরে বেয়াদবির সামিল!

উনার গলা ঘরোয়া। ‘মৃদু আপত্তি’র নামে তিনি যেভাবে আমারে কাফন দিয়া মোড়ায়া মৌলবাদী সাব্যস্ত করলেন, তাতে ভয়ে গলা শুকায়া আসছিল আমার। পানি খাইতে খাইতে ভাবলাম, বড়ভাইরা হঠাৎ কৈরা এইভাবে খেইপা উঠলেন ক্যান? আমার বুদ্ধি কম বৈলা, নাকি আমার বয়স কম বৈলা?



সুব্রত দা-র সাথে আমার তর্কের ইতিহাস বড় প্রাচীন। প্রায়-প্রতিবারই উনি (উনার সময়ের অভাবে বা আমার যুক্তিপ্রয়োগের নাদান ধরনের কারণে?) আলোচনা শেষ করেন না। এইবার তিনি অন্তত ফলোআপ করলেন। ধন্যবাদ তাঁকে।

এইবার ব্রাত্য রাইসু এবং সুব্রত গোমেজ আমার কথা বলার ধরন নিয়া আপত্তি জানাইলেন। উনাদের কনকুসিভ এবং জাজমেন্টাল হওয়ার ধরন নিয়া খোদ স্রষ্টাও আপত্তি করতে পারতেন, কিন্তু দুঃখের কথা হৈল, মডারেশনের দায়িত্ব আপাতত উনার হাতে নাই। এরকম অবস্থায় পড়লেই মন রেটরিক হৈয়া উঠতে চায়!

না। এইখানে বড়ভাইরা আছেন, উনারা ঠাট্টামশকরার মধ্যেও মৌলবাদের ভূত দেখতে শুরু করছেন।

আসেন তবে, রামগরুড়রীতিতেই কথা বলি। মাননীয় দাদা সুব্রত, আপনের এথিক্স সংক্রান্ত আলাপ (বা প্রলাপ) শুইন্যা আমার বিলাপ কৈরা কান্দতে ইচ্ছা হৈতেছে (কান্দলেও কি বেয়াদপ মৌলবাদী হৈয়া যামু?)। তর্কের খাতিরেই বলি আগে, এথিক্স বিদায় দিয়া আপনে আইন প্রণয়ন/বদল করবেন কিসের ভিত্তিতে? অর্থাৎ ফরাসীরা যে তাদের দেশে বোরখা-পড়া নিষেধ করার আইন করল, তারে আপনে রোধ করবেন কেমনে? মানবাধিকার দিয়া? তো এই মানবাধিকার তৈরি হয় কোন্ মূলনীতিতে? বুইঝেন কিন্তু বিষয়টা। আপনে কৈলেন, আপনে খুন করবেন না, কারণ খুন করলে আইন আপনেরে সাজা দিবে! যদি আইন আপনেরে সাজা না দিতে পারে? অর্থাৎ আপনের যদি আইনের উর্ধ্বে উঠার মতা থাকে, তাইলে খুন করবেন? যেমন বুশ-ব্লেয়াররা ইরাকে করতেছে? উনাদেরও উদ্দেশ্য কিন্তু আপনের মতই, মৌলবাদসংক্রান্ত ‘জটিলতা’ নিরসন। আপনের কথিত ‘জটিলতা’ নিরসনের ল্েযই কিন্তু উনারা আইন প্রণয়ন কৈরা ইরাকে আগ্রাসন জায়েজ করতেছেন।

আপনের আইন আর এথিক্স সংক্রান্ত ভাষ্য এক্কেবারে বুশ-ব্লেয়ারদের ভাষ্য হৈয়া গেল কেমনে?

তারপর ধরেন, এই যে আপনে কৈলেন এথিক্স একটা ব্যক্তিসাপে ব্যাপার, এইটা এত ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট বৈলা দিবার মত বিষয় না। এইটা নিয়া বহুত তর্কবিতর্ক আছে নীতিশাস্ত্রে। আপনের এবং আমার নীতিবোধ, তথা মুসলমান এবং খৃস্টানের নীতিবোধ এক না হৈলে সেইটা নিয়া একে অপরের সমালোচনা করতে পারবে না এইটা কেমন কথা! তাইলে তো পৃথিবীতে মোটামুটি কোনো আলাপই সম্পন্ন হৈবার কথা না! আমার তো মনে হয়, কেউ তার নিজের স্ট্যান্ডার্ডে দাঁড়ায়া অন্য কারো সমালোচনা করতেই পারে, তুলনা করতেই পারে। যেইটারে আমরা কই, কম্পারেটিভ স্টাডি। সমালোচনা করা মানে তো চাপায়া দেওয়া না!

একের মত গায়ের/চোপার জোরে অন্যে চাপায়া দেওয়ার নাম যদি মৌলবাদ হয়, তাইলে আন্ত-পাটাতন সমালোচনা শুনতে না-চাওয়ার ধামকি নিশ্চয়ই ফ্যাসিবাদ। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে এলিট ফ্যাসিবাদ।

পূর্বরাগপ্রণোদিত না হৈলে খেয়াল করার কথা যে, আমি অভিবাসনের বিরোধী তো না-ই, বরং এর পপাতী। কারণ আমি জাতিরাষ্ট্রের বর্তমান বিভেদ-রে উড়ায়া দেওয়ার মত অতিবিপ্লবী আজো হৈয়া উঠি নাই। জাতিরাষ্ট্র যেহেতু একটা বাস্তব সত্য, কাজেই অভিবাসন সত্য। কিন্তু দুলালের অভিবাসন প্রক্রিয়ার ব্যাপারে আমি (আইনি না) নীতিগত আপত্তি তুলছিলাম। ফলে আপনে যে ইমিগ্রেশন আইনের নানান ফিরিস্তি দিয়া সাত কাণ্ড রামায়ণ গাইলেন তা আমার কোনোই কাজে লাগল না। আইনি প্রক্রিয়ায় দুলালের কোনো গলদ নাই সেইটা আমার মত নাদানেরও না-জানবার কথা না। ফলে, বেয়াদবি না নিলে, আপনের মূল্যবান প্রশ্নোত্তর পর্বে আমি আর সামিল না হই!

আপনে কষ্ট কৈরা আমার লেখার মধ্যে ‘ভাবমূর্তি’র ভাবার্থক একটা প্যারাগ্রাফ বাইর করছেন বৈলা শুকরিয়া। কিন্তু আরেকটু অভিনিবেশ নিলে দেখতেন যে ঐ সময়েরই কোনো চিঠিতে আমি বিকল্প একটা শব্দ ব্যবহার করতে চেষ্টা করছি: আত্মসম্মান, বা নিজের কাছে নিজের অবস্থান। মাসরুর-এর শেষ মেইলটা আরেকবার পড়েন, সেখানে তিনি আমার বক্তব্যের একটা সারাংশ দাঁড় করাইতে চাইছেন। ইল-মোটিফ না থাকায় জিনিসটা ঠিকঠাক বাইর করতে পারছেন তিনি।

আর রেটরিক হওয়া, বা আপনের ভাষায়, তামাশা করাটা আপনের কাছে মৌলবাদী পন্থা মনে হৈছে। একটা দৃষ্টান্ত দেই: ধরেন, একজন মৌলবাদীর সাথে আদর্শ আর কর্মপন্থা নিয়া আপনের তর্ক হৈতেছে। তর্কশেষে দেখা গেল আপনের সব ভালো ভালো যুক্তিই তার কর্ণকুহরে হান্দাইতেছে না, সে তার জগতেই সতত বিরাজ করিতেছে। এখন আপনের থিওরি অনুযায়ী:

* গায়ের জোরে আপনের প্রগতিশীল মতাদর্শ তার উপর চাপায়া দিলে আপনে মৌলবাদী হৈয়া গেলেন।
* তার কুযুক্তি নিয়া রঙ্গরস করলেও আপনে সাদা-পোষাকধারী মৌলবাদী হৈলেন।
* আর চুপ থাকলে, যেহেতু আপনার নীরবতাও মৌলবাদ বিকাশে ভূমিকা রাখবে, সেইসূত্রেও আপনেরে মৌলবাদী কৈতে পারে কেউ কেউ!

তাইলে আপনের রাস্তা কোনটা? আসলে আপনে যে কয়েন দিয়া টস করতে কৈতেছেন, ঐটা হিন্দী শোলে সিনেমার অমিতাভের কয়েন দাদা, দুই পিঠেই ‘মৌলবাদী’ লেখা। একই কয়েন বুশ-ব্লেয়ারদের হাতেও আছে। ফলে আপনের/আপনাদের ফতোয়া নিয়া আমি ভাবিত না। ড. মাসুদ যখন আমার বমি আমারে খাওয়ান, ‘খালি মাঠ’ পাইয়া কবিসভায় আমি ডিসকোর্সের কচকচি করতেছি বৈলা কবিসভার সব সদস্যের বুদ্ধিবৃত্তি সম্পর্কে পাইকারি তামাশা করেন, ব্রাত্য রাইসু যখন দুলাল-বিষয়ে ‘কুত্তা’ শব্দ আপনের মুখে আবিষ্কার না-কৈরা আমার মুখে আবিষ্কার করেন, তার ভিত্তিতে আপনে আমারে সাদা পোষাকধারী মৌলবাদী-ই যে বলবেন, এ আর আশ্চর্য কি? নৈতিক সমস্যা যেহেতু আগে থেকেই নাই, তাই অন্যের জাজমেন্টের টুঁটি চাইপ্যা ধৈরা নিজের জাজমেন্ট গিলাইতে কোনো গণতান্ত্রিক সমস্যাও হয় না আপনাদের। আপনাদের এই মহতী কৃৎকৌশলকে সেলাম জানাই।



৪টি মন্তব্য:

Mahbub Morshed বলেছেন...

ভাল ব্লগ বানাইছেন সুমন ভাই।

সুমন রহমান বলেছেন...

মজা পাইতেছি বানাইতে গিয়া। ধন্যবাদ।

মুজিব মেহদী বলেছেন...

দারুণ লাগল আপনার ব্লগ।
অসংখ্য দরজা জানালা এর।
আলো-হাওয়াও তাই সীমাহীন।

যান্ত্রিক জটিলতায় আমি কয়েকদিন অচল ছিলাম, আপনার ডাকে সাড়া দিতে পারি নি।

সুমন রহমান বলেছেন...

ধন্যবাদ মুজিব মেহদী। দরজা জানলা বেশি করেই রাখলাম .... এইটা ভিজিটরদের সুবিধার জন্য। এই ব্লগে ঢোকার রাস্তা একটাই, কিন্তু বাইর হোয়ার রাস্তা অনেক...