শনিবার, ৩০ আগস্ট, ২০০৮

কবিতার পাঠ: ইমরুল হাসানের একটি কবিতা

ইমরুল হাসানের কবিতাটি এল ইমেইলে:


পাগল

কেউ কি আর চেষ্টা করে যাচ্ছে না, তোমার কি মনে হয়?
আড়ালে আড়ালে কতই না শ্রেণীভেদ, শাসিয়ে যাচ্ছে
রাস্তার পাশে তোমাকে দাঁড় করিয়ে যাচ্ছে একা!

ইচ্ছা হয়, উবু হয়ে বসে থাকি, রাস্তার কোণায়
ড্রেনের পাশে, মাথানিচু; আগে, অনেক অনেক আগে যেমন
বসে থাকতো, পাগল! কিছুটা সুশ্রী আর যার সুস্থ হওয়ার আশা
মরে যাই নাই তখনো, তাকে দেখলে মনে হতো যে, সে আর
পাগল হতে চায় নাই, কিছু একটা খুঁজতে খুঁজতে বসে পড়েছে
যা আর স্বাভাবিক নয়, যাকে কিনা বলা হচ্ছে, ভাবা হচ্ছে
সে আর যা নয়, যা সে হতে চায় নাই, যা আসলে আর কিছুই না ...

এমনই একটা র্নিবিকল্প সময়, সন্ধ্যাবেলায়
কতকিছুই না ভাবছে মানুষ-জন, চলে যাচ্ছে, ফুসফাস করে
হাঁপাতে হাঁপাতে পার হয়ে যাচ্ছে, কতকিছুই তো করছে ...
কেউ কি আর ড্রেনের ভিতর থেকে টাকা খোঁজার মতো করে
অন্যকিছু বের করে আনার চেষ্টাটা করে যাচ্ছে না?
তোমার কি মনে হয়?

২৯.০৮.০৮


একঝলক পাঠ, তারপর আবার প্রতিদিনের জীবনে। কিন্তু সেই যে পাগল, যে কিছুটা সুশ্রী, এবং সুস্থ হবার আশা এখনো শেষ হয়ে যায় নাই যার, তাকে তাড়ানো গেল না। আশাহীন যে পাগলামি তাকে ভুলে যাওয়া সহজ, হয়ত জরুরিও, আবার পাগলামিহীনতায়ও কোনো গল্প নেই, মনে রাখাও নেই। প্রতিদিনের এই যে জীবন, পথে-পাওয়া জীবন, এই যে সব মৃদু অস্বস্তি বাড়ি ফিরবার পথে, এই যে একটুকরা বিষাদ... এগুলোই ইমরুলকে কবিতায় উবু করে। মনে হবে যেন মাখনে ছুরি চালাচ্ছে সে, কিন্তু আলাদা যে ইমেজটা হাজির থাকে মনে, কবিতাটি পড়বার বহুদিন পরেও, আমি খেয়াল করি ক্রমে সেটা গ্রানাইটের মত শক্ত হয়ে যায়!

একেকটা ইমেজের এত শক্তি! ভাবি।

ইমরুলের এই কবিতায় (অন্য অনেক কবিতায়ও বোধ করি) কবি কথা বলছে যার সাথে, বা যাকে আসলে কবিতাটি শোনানো হচ্ছে, তার ব্যক্তিত্ব অন্যরকম। সে যেন সব কিছু ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট বোঝে, তাই ইমরুল তাকে নানান ইমেজ দিয়ে, ইমেজের ভেতর গুপ্তির মত প্রশ্ন গুঁজে দিয়ে সংশয়ী করে তুলতে চায়। কবিতা পাড়ার জন্য এমন একজন সঙ্গী পেয়ে যাওয়া বেশ আরামের, কবির জন্য। জরুরিও বটে।

ইমরুলের কবিতা কানের কাছে ফিসফিস করে বলার মত, এবং বলার পর, যিনি বললেন এবং যিনি শুনলেন তারা ভুলে যাওয়ার ভান করবেন সত্যি, কিন্তু ঐ একটা-দুটা ইমেজ থাকবে যা আপনার সংবেদনার নরম মাটিতে গ্রানাইটের মত অনড় হয়ে পড়ে থাকবে। আপনি ভাববেন, ঠিক আছে পরে সরিয়ে দেবেন 'খন, কিন্তু... হাহাহা.... পারছেন কি?

২টি মন্তব্য:

Imrul Hassan বলেছেন...

আসলে সত্যি কথা বলতে গেলে, একটা কবিতা লিখার পর তাকে মৃত-মৃত মনে হয়। কারণ কোনভাবেই, কারো সাথেই যোাগাযোগের কোন উপায় যেন আর নাই। এই কবিতাগুলির জন্ম খুবই এক-পাক্ষিক রকমের একটা ব্যাপার বলে মনে হয়। অথচ ইন্টারনেটে কত নতুন নতুন সংযোজন, যোগাযোগ গড়ে তোলার কতই না নতুন নতুন তরিকা! আর এই কবিতার ব্যাপারটা দেখেন, কোথাও প্রকাশের কোন ইচ্ছা-ই যেন নাই তাঁর, কারো কাছে সে আর প্রকাশিত হতে পারতেছে না, এমনই দম-বন্ধ একটা ব্যাপার, এই কবিতা-লেখা ... একজন পাঠক খুঁজে পাওয়াটাও একটা নতুন জন্মের মতো ঘটনা ... কেন আর পড়বে তারা এইসব ... কবিতা কি খুব জরুরী একটা বিষয়, আমাদের বেঁচে থাকার জন্য? ... কেন? ...

আপনার পোস্টের প্রেক্ষিতে দুইটা কথা যে বলা গেলো, বলতে যে পারলাম, এইটাও এক ধরণের স্বস্তি্ব; বধির তো হয়া আছি অনেকদিন, ভাবছিলাম, কথা বলাও হয়তো ভুইলা যাচ্ছি ...

ব্লগটা খুবই অর্গানাইজড হইছে। পুরান লিখাগুলির সাথে নতুন পোস্টও ছাড়েন। আড্ডা চালানো যাবে। এছাড়া পুরান অনেক আলাপও তো শেষ নাই ... এই মুহর্ূতে জগৎ শেঠ এর প্রসঙ্গটা মনে হইতেছে ... কবিসভায় যেটা একবার তোলা হইছিল ... নিন্মবর্গ নিয়া কথাও তো শুরু হইছে ... সব মিলায়া নতুন একটা স্পেস তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা দেখতেছি ... সময়-সুযোগ মতো পার্টিসিপেট করবো ... আপনি চালায়া যান!

dhuturafm বলেছেন...

কবিতার প্রকাশ, ছাপা, বই করা, পোস্টিং এগূলো আসলে সন্তানকে ইস্কুলে পাঠানোর মত!কোন ইস্কুল টিনচালা, কোনটা পাকা দালান, কোনটা প্রাইভেট, কোনটা সরকারি।
কিন্ত টিন চালা দরমার ব্যড়ার ইস্কুলেও মেধার বিকাশ ঘটতে পারে পাকা দালানের চেয়েও বেশি।আর সন্তান যে সেত সন্তানই!মরার আগে তাকে মৃত ভাবার কোন কারন নাই।তবে বাংলাদশের ভেজা আবহাওয়ায় কাগজ ওদায় যায়, পুরান খেরো খাতাগুলোতে কেমন স্যতসেতে একটা গন্ধ হয়, গ্রামে - শহরে সবখানে।একটা মমি মমি মর্বিড অনুভতি।

আবহাওয়া ভর করে আত্মায়!

এখানে সেখানে পড়ে বুঝি যে আপনার একটা উল্লাসের দিক আছে।গদ্যত খুবই ঊল্লসিত।এই কবিতাটাও ভাল।ভেজ়া আবহাওয়া, আত্মার উল্লাস দুইই আছে।কোনটা জ়য়ী হবে তা জানাটাইত খেলা!